সিএসই কর্তৃক “ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২” পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
৫ জুন, ২০২১,চট্টগ্রাম
প্রিয় প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের সদস্যবৃন্দ আসসালামুআলাইকুম।
বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ । বাঙালিজাতি নতুন উদ্দীপনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে অর্থনৈতিক মুক্তির রথে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার গৌরবময় সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে আমাদের উত্তরণ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে। এ যেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্তের অবদান ‘’মেইড ইন বাংলাদেশকে’’ উপজীব্য ধরে এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাসকে সামনে রেখে বিগত ০৩ জুন, ২০২১ ইং তারিখে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মহান জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন।
বিশ্ব মহামারী কভিড -১৯ নভেল করোনা ভাইরাস এর এই ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে ‘’জীবন জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’’ শিরোনামে যে বাজেট অর্থমন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত প্রজ্ঞা এবং সাহসের সাথে উপস্থাপন করেছেন, সেজন্য চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ এর পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
বাজেট বক্ত্রিতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকার পুঁজিবাজার গতিশীল ও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে । স্টক এক্সচেঞ্জসমূহকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার উদ্দেশ্যে ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কিছু পদক্ষেপ শীঘ্রই বাস্তবায়ন করা হবে। যেমন- পুঁজিবাজারে ট্রেজারি বন্ড এর লেনদেন চালু করা ,আধুনিক পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্ত, সুকুক , ডেরিভেটিভস , অপশন এর লেনদেন চালু করা, ইটিএফ প্রচলন করা, ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত করা, ইত্যাদি । সার্বিক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অনেকগুলো বিষয় গুরত্তের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে এই বাজেটে । সার্বিক দিক বিবেচনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেট শেয়ারবাজার বান্ধব বলে আমরা মনে করি ।
প্রস্তাবিত বাজেট এর এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে আগামীতে শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহন বাড়বে ।
১। বিগত অর্থবছরে বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিধানসমূহ বাজারবান্ধব ছিল । এ বছর আমাদের চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে্, বিদ্যমান বিধানসমূহ যেন অপরিবর্তিত থাকে। আমরা আনন্দিত যে, প্রায় সকল বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে । তবে স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্যদের লেনদেনের উপর বিদ্যমান উৎস কর ০.০৫% থেকে পূর্বাবস্থায় অর্থাৎ ০.০১৫% নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল যা বাজেটে ঘোষিত হয়নি। ব্রোকারেজ হাউজগুলুর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালন খরচ বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে আসার কারনে এই কর্তনকৃত অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে অধিক হয়। তাই উৎসে করহার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার অনুরুধ জানাচ্ছি। এছাড়াও ব্রোকারদের বিও অ্যাকাউন্ট ম্যানটিনেন্স ফী হতে প্রাপ্ত আয় ১০০ টাকা হতে বিবেচ্য করকে উল্লেখিত ০.০১৫% উৎসে কর সংযুক্ত হয়েছে বলে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করছি।
২। ঘোষিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের বিদ্যমান করহার ২৫% থেকে ২২.৫% এ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, এই করহার ২০% এ কমিয়ে আনা। এতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি পাবে। ফলশ্রুতিতে মৌল ভিত্তি সম্পন্ন দেশি, বিদেশী এবং বহুজাতিক কোম্পানিসমুহ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।
৩। কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করা-সহ স্টক এক্সচেঞ্জ এর কারিগরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়য়েনের জন্য মূলধন পুনঃবিনিয়োগের প্রয়োজন হয় । বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা ও দীর্ঘ মেয়াদে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে সিএসইর আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জসমূহের আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনস্বার্থ রক্ষায় নিয়জিত বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরত্তপূর্ণ অংশীদার হিসেবে এক্সচেঞ্জসমুহের প্রযোজ্য কর্পোরেট করহার ১৫% নির্ধারণ করা যেতে পারে ।
৪। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিসমূহের শেয়ার বিক্রির কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ঘোষিত বাজেটে এর কোন পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি । অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার অফ লোড করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
৫। বাক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০% কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদশিত অর্থ বিনিয়োগের সময়সীমা এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, যার সময়সীমা ঘোষিত বাজেটে বাড়ানো হয়নি । আমরা বিদ্যমান আইনের এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি ।
৬। বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এসএমই বোর্ডের মাধ্যমে স্বল্প মুলধনী কোম্পানিসমূহকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করছে । আমরা তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিসমূহের জন্য ১০% হারে ০৫ বছরের জন্য কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম। এতে অধিক সংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে।
৭। বর্তমানে শুধুমাত্র জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে করমুক্ত। দেশের অর্থনীতির আকার এবং বাঙ্কিং খাতের অস্থিতরতার প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরি অতি জারুরি । এই পদক্ষেপ পুঁজিবাজারের পাশাপাশি আর্থিক খাতেও শৃঙ্খলা আনয়ন করতে পারে । সে কারনে নতুনভাবে একটি বন্ড মার্কেট তৈরি করার লক্ষ্যে সকল প্রকার বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত করা প্রয়োজন এবং জিরো কুপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সহ সকল করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ।
৮। লভ্যাংশ প্রদানের সময় কোম্পানি তার মুনাফার উপর কর প্রদান করে, পুনরায় লভ্যাংশ বিতরণের সময় কর কর্তনের জন্য দ্বৈত করের সৃষ্টি হয়। লভ্যাংশ আয়ের উপর এই দ্বৈত করনিতি পরিহার করা যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০,০০০ টাকা থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
পরিশেষে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………..
©2024 Chittagong Stock Exchange PLC. All rights reserved.