চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই) কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রশিক্ষন কর্মসূচীর আয়োজন
৬ জুন, ২০২১, চট্টগ্রামঃ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রশিক্ষন কর্মসূচীর আয়োজন করেছে ।
এই আয়োজনে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই) দুইদিনব্যাপী যথাক্রমে ০৫ এবং ০৬ জুন ২০২১ ট্রেকহোল্ডারদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তদারকি কর্মকর্তা এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি ও বিনিয়োগকারিদের জন্য দুটি পৃথক প্রশিক্ষন সম্পন্ন করেছে।
প্রথম দিন শনিবার ০৫ জুন, ২০২১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ‘’সকল কর্মচারী হবে জনগনের সেবক ‘‘এই আদর্শকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বিনিয়োগকারীদের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ গ্রহন করেন ট্রেকহোল্ডারদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তদারকি কর্মকর্তা এবং অনুমোদিত প্রতিনিধি ।
দ্বিতীয় দিন রবিবার, ০৬ জুন, ২০২১ ‘’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অর্থনৈতিক ভাবনার আলোকে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক’’ প্রশিক্ষণের আয়জন করা হয়। এতে অংশ গ্রহন করেন ট্রেকহোল্ডারদের বিনিয়োগকারীগণ।
উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ডঃ শামসুদ্দিন আহমেদ, কমিশনার, বিএসইসি প্রধান অতিথি হিসেবে এবং জনাব মোঃ মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক ও জনাব শেখ মাহবুব উর রহমান ,পরিচালক ,বিএসইসি, প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিথ ছিলেন ।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে প্রশিক্ষন কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসই এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোঃ মামুন-উর-রশিদ ।
স্বাগত বক্তব্যে জনাব মামুন বলেন, বর্তমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতেও ক্যাপিটাল মার্কেটের ডেভেলপমেন্ট এর জন্য আমরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনার এর আয়োজন করে যাচ্ছি । ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের আয়োজন করা হচ্ছে, যা সাধারণত অক্টোবর এর প্রথম সপ্তাহে সংঘটিত হয়। বিনিয়োগ শিক্ষা হল, ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান। সঠিক বিনিয়োগ শিক্ষার ফলে আর্থিক জালিয়াতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং সুরক্ষিত আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার দ্বৈত সুবিধা পাওয়া যায় । বিনিয়োগ শিক্ষা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন বিনিয়োগ পণ্যের উপযুক্ততা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রদান করে, তাদেরকে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে । এই কর্মসূচিগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্ম শত বার্ষিকীকে যথাযথ উদযাপনে গৃহীত কর্মসূচির একটি প্রয়াস মাত্র । এ উপলক্ষ্যে গত ১৭ মার্চ, ২০২১ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মসূচি আরম্ভ হয় । কভিডের কারনে কর্মসূচিগুলো পিছিয়ে গিয়েছে। সর্বশেষ একটা কথা হল,অর্থনৈতিক মুক্তির যে কথা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন তা অর্জন করতে হলে আমাদেরকে ইথিকালি ডেভেলপ হতে হবে। তাই কর্মকর্তাদের বিনিয়োগকারীদের সেবক হয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রথম দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিএসই এর চেয়ারম্যান জনাব আসিফ ইব্রাহিম ।তিনি বলেন সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহ অন্যান্য ভাল রিপোটিং থেকে আমরা বলতে পারি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেত্রিত্তে আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি । এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হয়েছি । ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি । এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষ ও বলিষ্ঠ শক্তিশালী পুঁজিবাজার । সামনে সব ধরনের বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগের সিংহভাগ উৎস পুঁজিবাজার হতে হবে। আমাদের বর্তমান জিডিপি ১২% ,সেই জিডিপির তুলনায় যে মার্কেট কাপিটার অনুপাত তা বিশ্ব বেঞ্চমার্কের তুলনায় বেশ দুর্বল এবং আমরা আশানুরূপ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। এখানে উল্লেখ্য, এখনও প্রাইভেট সেক্টর এর ইনভেস্টমেন্ট এর উৎস হচ্ছে ব্যাংক, যেখানে মূল উৎস হওয়া উচিত ছিল পুঁজিবাজার । ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারকে উৎসে পরিণত করার জন্য কাজ করে যেতে হবে, বিশেষ করে ব্যাক্তি খাতে বিনিয়োগ,অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে। চট্টগ্রামেই অনেক কাজ হচ্ছে , শিল্পাঞ্চল হচ্ছে, নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট এর খাত তৈরি হচ্ছে, আরও হবে, আমরা আশা করছি সামনে এই কাজগুলোর জন্য বিনিয়োগের প্রধান উৎস হবে পুঁজিবাজার। একটা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত সুচারুভাবে এগিয়ে নিতে আমাদের আরও কাজ করে যেতে হবে । প্রথম দিনের আলোচিত বিষয় গুলো হল ক্যাপিটাল মার্কেট এন্ড এথিকস এবং ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডাম্যানটালস । দেশের অর্থনৈতিক প্রবিদ্ধির জন্য এথিক্স এর বিকল্প নাই ,এছাড়াও প্রয়োজন কর্পোরেট গভরনেন্স , সুনিশ্চিত কর্মপন্থা । ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডাম্যানটালস ও জানতে হবে । আমাদের আর শিখতে হবে ,যত শিখবো তত বেশি শিক্ষিত হবো এবং সুচিন্তিত মতামত নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারব। ‘’মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার, অর্থায়নের উৎস হবে পুঁজিবাজার’’ আই লক্ষ্যে বিএস ই সি এর সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে যেতে হবে। সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ এই আয়জনে অংশগ্রহনের জন্য ।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডঃ শামসুদ্দিন আহমেদ ,কমিশনার,বিএসইসি বলেন, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল ৮ মিলিয়ন ডলার যা এখন ২০২০-২১ সালে হয়েছে ৩২০/৩৩২ বিলিয়ন ডলার । স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের এ এক বিশাল অর্জন। এই অর্জনের ভিত্তি প্রতিথ হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষা । আমাদের সর্বদাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাতে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছি ।১৯৭২ সালে পার কাপিটা জিডিপি ছিল মাত্র ৯৭ ইউএস ডলার , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছরে ১৯৭৫-এ উন্নীত করেছেন ২৭৩ ইউএস ডলার এ । এর পরে আমাদের অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। এখন আমাদের পার কাপিটা জিডিপি ২২২৭ ডলার । বিশাল অর্জন। আমরা আখন আর তলাবিহিন ঝুড়ি অর্থনীতিতে নেই , বরং আমরা এখন অনেক দেশকে অর্থ ধার/বিনিয়োগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি । ৫০ বছরে অর্জন কম নয় । জাতির জনকের সোনার বাংলা বিনির্মাণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে । সে সময় তিনি প্রাইভেট সেক্টরকে ২।৫ থেকে ৩ কোটি টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন । বুজেচিলেন এর গুরত্ত । সুতরাং সেই প্রচেষ্টা কে ধরে রাখতে হলে আমাদের বিভিন্ন কাজ করে এগিয়ে নিতে হবে । আর কাজ করার জন্য আরও দক্ষ ও উদ্যোগী হতে হবে । কাজের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষন এর কোন বিকল্প নাই। যত প্রশিক্ষন নিবেন তত নিজের মধ্যকার যোগ্যতা ,দক্ষতা সুদৃঢ় হবে । বিএসইসি এ ক্ষেত্রে তাদের অবিরাম কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। বিএসইসি এর নিয়ন্ত্রিত বিশেষায়িত দুটি প্রতিষ্ঠান বিআইসিএম , বিএসএএম এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে সিএসই এবং ডিএসই ও নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে । বিএসইসি এই করনাকালিন সময়ে অনলাইন, অফলাইন এর মাধ্যমে প্রশিক্ষন দিচ্ছে এবং অব্যাহত রাখবে। সামনে পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সে এর জন্য প্রশিক্ষনকে বাদ্ধতামুলক করার জন্য কাজ করা হচ্ছে । সবাইকে অনুরুধ থাকবে যখন যে রকম প্রশিক্ষন প্রয়োজন সে জন্য আমাদেরকে অবহিত করবেন এবং নিজেকে উন্নত করবেন।
উভয় দিনে প্রশিক্ষন প্রদান করেন জনাব মোঃ মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক ও জনাব শেখ মাহবুব উর রহমান ,পরিচালক ,বিএসইসি। এতে উপস্থিত অংশকারিগন প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহন করেন এবং মূল্যবান মতামত বিনিময় করেন ।
প্রশিক্ষন অনুষ্ঠানসমূহ সঞ্চালনা করেন সিএসই এর এজিএম অ্যান্ড হেড অফ ট্রেনিং একাডেমী কর্মকর্তা জনাব আরিফ আহমেদ ।
এই সময় আরও উপস্থিথ ছিলেন সিএসই এর সম্মানিত পরিচালকবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ।
বিস্তারিত জানতে
তানিয়া
সিএসই- সি এন্ড পি আর
©2024 Chittagong Stock Exchange PLC. All rights reserved.